সর্বশেষ আপডেট

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পরিচিতি এবং ব্যবহার

 Biology Practical

যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পরিচিতি এবং ব্যবহার

পরীক্ষা : যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পরিচিতি, ব্যবহার ও পর্যবেক্ষণ।

তত্ত : যে যন্ত্রের সাহায্যে অতীব ক্ষুদ্র বস্তুকে বহুগুণ বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Microscope) বলে। এটি একটি গ্রীক শব্দ Micros = ক্ষুদ্র + Skopeein = দেখা। অণুবীক্ষণ যন্ত্র বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন – আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র, ফেজ কন্ট্রাস্ট যন্ত্র। আমাদের দেশে সাধারণতঃ যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তা আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এ আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দু’প্রকার। যেমন – (ক) সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Simple microscope) ও (খ) যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Compound microscope)। এ অংশে যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পরিচিতি, ব্যবহার এবং পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করা হলো।

পরিচিতি : যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বিভিন্ন অংশকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – (ক) যান্ত্রিক অংশ (Mechanical parts) এবং (খ) আলোক সম্বন্ধীয় অংশ (Optical parts)।

Part of Compound Microscope
চিত্র: একটি যৌগিক অনুবীক্ষণ বিভিন্ন অংশ

(ক) যান্ত্রিক অংশ

পাদদেশ (Base)– যে চেপ্টা অংশের উপর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সমস্ত দেহটি বসানো থাকে তাকে পাদদেশ বলে।

বাহু (Arm)- পিলারের উপর হেলান স্ক্রু দ্বারা আটকানো উপরের বক্র অংশকে হাতল বা আর্ম বলে। যন্ত্রটিকে স্থানান্তরের সময় আমরা সাধারণত এ অংশটি ধরে থাকি। হাতলের মাথা এবং দেহ নলের মাঝখানে দুটি স্ক্রু আছে। একটিকে বলা হয় ‘স্থুল সন্নিবেশক স্ক্রু’ এবং অন্যটিকে বলা হয় ‘স্থুল সন্নিবেশক স্ক্রু’।

দৈহিক নল (Body tube)– এটি একটি লম্বা নল। হাতলের শেষ অংশে এটি আটকানো থাকে। সন্নিবেশকদ্বয়ের সাহায্যে ঘুরিয়ে দেহ নলকে উপরে নিচে উঠানামা করা হয়।

টানানল (Draw tube)– টানানলটি দেহ নলে বসানো থাকে। প্রয়োজনে উপরে টানা সম্ভব হয়।

নাসিকা ( Nose Piece)– এটি গোলাকার এবং দেহ নলের নিম্নাংশে আটকান থাকে। এতে তিনটি প্যাচকাটা ছিদ্র থাকে যাতে বিভিন্ন বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন অভিলক্ষ (Objective) লাগান হয়।

মঞ্চ ( (Stage)- এটি আয়তাকার এবং গোড়ার দিকে হাতলের সাথে আটকান থাকে। মঞ্চের মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে যার মধ্য দিয়ে আলো এসে পড়ে। মঞ্চের গোড়ার দু’দিকে ক্লিপ থাকে। মঞ্চে স্লাইড রেখে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে দেয়া হয়। ডায়াফ্রাম ( Diaphragm)- এটি মঞ্চের নিচে অবিস্থত। একে ইচ্ছা মতো সংকুচিত এবং প্রসারিত করে আলোক নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

স্থুল ও সূক্ষ সন্নিবেশক স্ক্রু (Coarse and fine adjustment screws) – হাতলের মাথায় দু’পার্শে¦ যে দুটি বড় স্ক্রু থাকে একে ‘স্থূল সন্নিবেশক স্ক্রু’ বলে। এর সাহায্যে টানা নলকে অতি সহজে উঠানামা করা যায়। স্থূল সন্নিবেশকের ঠিক নিচে একজোড়া স্ক্রু থাকে যার সাহায্যে টানানলকে অতি সূ²ভাবে উঠানামা করানো যায়। তাই একে ‘ সূক্ষ সন্নিবেশক স্ক্রু’ বলে।

(খ) আলোক সম্বন্ধীয় অংশ

অভিনেত্র ( Eye-Piece)- এটি একটি ছোট নল যা বিশেষ টানানলের অভ্যন্তরে ঢুকানো থাকে। এর উপরে ও নিচে একটি করে লেন্স থাকে। এতে চক্ষু রেখে স্লাইডের বস্তু দেখতে হয়।

অভিলক্ষ ( Objectives)– এটিও ছোট নল বিশেষ এবং লেন্স লাগানো থাকে। সাধারণত বিভিন্ন বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি অভিলক্ষ নাসিকার তিনটি প্যাচের মধ্যে লাগানো থাকে।

কনডেনসার : এটি দুটি লেন্সের সমষ্টি মাত্র। এটি মঞ্চের ছিদ্রের নিচে আটকান থাকে। দর্পনকে ইচ্ছামাফিক এদিক সেদিক ঘুরিয়ে ডায়াফ্রাম ও কনডেনসারের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আলো ফেলা হয়।

দর্পণ ( Mirror) : এটি একটি প্লেনো কনকেভ (ঈড়হপধাব) দর্পন। এটি স্তম্ভের গোড়ায় আটকান থাকে। দর্পনকে ইচ্ছা মতো ঘুরিয়ে ডায়াফ্রাম ও কনডেনসারের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আলো ফেলা হয়।

অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ এবং অভিনেত্রের গায়ে লিখিত বিবর্ধন ক্ষমতা গুণ করে বস্তুটি আকারে কতগুণ বর্ধিত হলো তা নির্ণয় করা যায়।যেমন- অভিনেত্রের বিবর্ধন ক্ষমতা (Magnification power) 10x এবং অভিলক্ষের বিবর্ধন ক্ষমতা 20x। তা হলে দর্শনীয় বস্তু 20x10 = 200 গুণ বর্ধিত হবে।

অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবহার এবং পর্যবেক্ষণ :

ব্যবহারিক ক্লাসে শিক্ষকের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিতভাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবহার এবং কার্য সম্পাদন করতে হবে-

  • প্রদত্ত নমুনা কী ও কী করতে হবে প্রশ্ন পড়ে বুঝে নিতে হবে বা শিক্ষকের সহযোগিতা নিতে হবে।
  • অণুবীক্ষণ যন্ত্র পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুছে প্রদত্ত নমুনাটির আকার, আকৃতি অনুসারে এদের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য এবং অন্তর্গঠন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনে ভালো ব্লেড দ্বারা কেটে স্লাইডে মাউন্ট বা স্থাপন করে সর্তকতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লেবেলযুক্ত চিত্র অঙ্কন করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় চিত্র অঙ্কন ও বর্ণনা লেখার পর এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করে সাথে সাথে নমুনাটি কী ছিল তা শনাক্ত এবং প্রয়োজনে বর্ণনা করতে হবে।
  • ছবি সর্বদাই বড় আকারে অঙ্কন করতে হবে। ছবির লেবেল একদিকে এবং এক লাইনে লেখা উচিত।
  • ব্যবহারিক খাতায় সিটের উপর বড় হরফে পরীক্ষণের নাম এবং একদিকে তারিখ লিখতে হবে। সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই পেন্সিল ব্যবহার করতে হবে।
  • প্রস্তুতকৃত সিটটিতে ঐ দিনই শিক্ষকের স্বাক্ষর নিতে হবে।
  • ব্যবহার শেষে অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি পরিস্কার করে যথাস্থানে রাখতে হবে।


Post a Comment

0 Comments